Translate

Monday, December 14, 2015

বই পড়া

বই হলো জ্ঞানের আধার। সৃষ্টিজগত, সৌরজগতসহ বিশ্বব্রহ্মা-ের আকাশ পাতাল পাহাড়সহ দেশ বিদেশের উত্থান পতন, জাতি ধর্ম কৃষ্টি সাহিত্য জ্ঞান বিজ্ঞানের তাবৎ জ্ঞান ও তথ্য পাওয়া যায় বইয়ে। তাই জাগতিক ও বৈষয়িক জ্ঞান অর্জনে নিজেকে সমৃদ্ধ করতে বই পড়ার বিকল্প নেই। তাই তো জ্ঞানীগুণিরা বলেন বই হলো মানবজীবনের প্রকৃত বন্ধু এবং জীবনসঙ্গী। ওমর খৈয়ামের ভাষায় ‘রুটি মদ ফুরিয়ে যাবে/প্রিয়ার কালো চোখ ঘোলাটে হয়ে আসবে/কিন্তু একটি বই অনন্ত যৌবনা/যদি তা তেমন বই হয়।’ প্রতিটি মানুষ তাঁর পেশাগত জীবন বেছে নিয়ে সে বিষয়ে পড়ালেখা করে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়। কিন্তু তার বাইরে জ্ঞানকে আরো বিকশিত ও সমৃদ্ধ করতে গল্প উপন্যাস, কবিতা, বিজ্ঞান, ইতিহাস, ভ্রমণকাহিনী ধর্মীয়সহ নানা বিষয়ের বই পড়তে হয়।
এতে পাঠকের জ্ঞানের পরিধি বাড়ে, ধর্মীয় ও মানবিক জ্ঞানের অধিকারী হয়ে উঠে। সাথে সাথে তাঁর ভেতরে মানবিকতা, দায়িত্ব সচেতনতা, দেশপ্রেম জন্ম নেয়। পার্থিব জগতে ভালোমন্দের পার্থক্য জানতে হলে সবচেয়ে আগে প্রয়োজন জ্ঞান অর্জন। মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ মুসলমানদের অনুসৃত ঐশী ধর্মগ্রন্থ পবিত্র কোরআনের প্রারম্ভেই বই পড়ার তাগিদ দিয়েছেন। পাক কোরআনের সর্বপ্রথম নাজিলকৃত পাঁচটি আয়াতের মধ্যে চারটিই পড়া নিয়ে। তাতে ইরশাদ হয়েছে “পাঠ করো তোমার প্রতিপালকের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন। যিনি মানুষকে জমাট রক্ত থেকে সৃষ্টি করেছেন। পাঠ করো আর তোমার প্রতিপালক মহিমান্বিত। যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি মানুষকে শিক্ষা দিয়েছেন, যা সে জানত না।” (সূরা আল আলাক, আয়াত ১-৫)। পাক কোরআনের আলোকে আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা.) জ্ঞান অর্জনের প্রতি সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করে ঘোষণা করেছেন “বিদ্যা অন্বেষণ করা প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর ওপর ফরজ” (বায়হাকি)
আমাদের দেশে লিখতে পড়তে জানা লোকের সংখ্যা খুব একটা সন্তোষজনক নয়। তারপরও যাঁরা লিখতে পড়তে পারেন তাঁদের মধ্যেও তাঁদের অবসর সময়ে দৈনিক পত্রিকা,সাময়িকী সহ বিভিন্ন বিষয়ের বই কতজন পড়েন। নিশ্চয় সে সংখ্যাটাও খুব একটা ভালো না।

একটা বাস্তব চিত্র তুলে ধরা যাক। আমি যে ভবনে থাকি সেখানে আমরা দশটা পরিবার থাকি। আমরা সবাই শিক্ষিত পরিবার। সবগুলো পরিবার বই পড়াতো দূরের কথা দৈনিক পত্রিকা নেন মাত্র তিনটি পরিবার।
সামান্য একটি পত্রিকা নিতে এত অনিহা কেন? প্রতি মাসে ২৫০/-৩০০/- টাকা খরচ হবে এই ভয়ে কি দৈনিক পত্রিকা নেব না? মনে রাখতে হবে পেটের ক্ষিধে মেটাবার জন্য যেমন প্রতিদিন খেতে হয় তেমনি আত্মার খোরাক মেটাবার জন্র প্রতিদিন কিছু না কিছু অর্থ ও সময় ব্যয় করতে হয় বই,পত্রপত্রিকা পড়ার পেছনে। এতে কেউ গরীব হবেন না, অর্থকষ্টে পড়বে না। বরং পাঠকের জ্ঞান সমৃদ্ধ হবে, ভালমন্দ, ন্যায় অন্যায় পরখ করতে জানবে। তাছাড়া আমাদের ভেতরে যে মানুষটা ঘুমিয়ে আছে সে জেগে উঠবে এবং বাইরের রক্ত মাংসের মানুষটাকে সুন্দর পরিচ্ছন্ন ও পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবে।
আমরা জীবনের অনেকটা সময় গল্পগুজব বা বসে কাটাই। এ সময়টাকে বই পড়ার মাধ্যমে কাটাতে পারি। দূরে কোথাও যাবার পথে (ট্রেন, স্টীমারে বা দূরপাল্লার বাসে) সাথে একটা বই নিন। দেখবেন বইটা পড়তে পড়তে কি সুন্দর সময়টা কেটে যাচ্ছে। আমরা আমাদের ছেলেমেয়ের ভবিষ্যত নিয়ে ভাবি। ভাববেন অবশ্যই, তার সাথে তাদের মধ্যে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। ছেলেমেয়েদের, আত্মীয়স্বজনের জন্মদিনে অন্যান্য সামগ্রীর সাথে কিছু বই উপহার দিন, সেই উপহারই হবে শ্রেষ্ঠ উপহার। প্রতিমাসে একটি করে সন্তানদের বই উপহার দিন। প্রতিটি শিশুকে বই মনষ্ক করে গড়ে তুলুন। পাড়ায় পাড়ায় পাঠাগার গড়ে তুলুন। এটিই হলো বড় সামাজিক কাজ। আসুন, সবাই বই পড়ি। বই পড়ার জন্য অন্যদের উৎসাহিত করি।
 



১.স্পিনোজা বলেন: ভালো খাদ্য বস্তু পেট ভরে কিন্ত ভাল বই মানুষের আত্মাকে পরিতৃপ্ত করে।
২. দেকার্তে বলেন: ভালো বই পড়া মানে গত শতাব্দীর সেরা মানুষদের সাথে কথা বলা ।
৩. ইউরোপ কাপানো নেপোলিয়ান বলেন: অন্তত ষাট হাজার বই সঙ্গে না থাকলে জীবন অচল ।
৪. জন মেকলে বলেন: প্রচুর বই নিয়ে গরীব হয়ে চিলোকোঠায় বসবাস করব তবু এমন রাজা হতে চাই না যে বই পড়তে ভালবাসে না ।
৫. নর্মান মেলর বলেন: আমি চাই যে বই পাঠরত অবস্থায় যেন আমার মৃত্যু হয়।

No comments:

Post a Comment