Translate

Monday, December 7, 2015

মিথ্যা

সত্যের চেয়ে মিথ্যা বলাটা অনেক সময় সহজ এবং সুবিধাজনক। যদি কেউ দাবি করে জীবনে কখনোই মিথ্যা বলেনি, তাহলে ধরে নেওয়া যায় সে মিথ্যা বলছে। অনেক সময় অবচেতন মনেই আমাদের মুখ থেকে মিথ্যা বেরিয়ে যায়। সত্য থেকে বিচ্যুত হওয়ার ব্যাপারটা খেয়ালই থাকে না। কিন্তু বিজ্ঞান এ ব্যাপারে কী বলে? আমরা কেন প্রায়ই মিথ্যা বলে থাকি? এটা কি কোনো রোগ? মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, কম গুরুত্বপূর্ণ মিথ্যা কখনো কখনো ইতিবাচক হতে পারে। আত্মরক্ষা বা অন্যকে বাঁচানোর স্বার্থেও মানুষ মিথ্যা বলে থাকে। আবার অন্যের কাছে নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে উপস্থাপন করতে মিথ্যা বলা হয়। কিন্তু এ ধরনের মিথ্যা অন্যদের কাছে কাউকে ভুলভাবে উপস্থাপন করে।
তাই মিথ্যা পরিহার করাই উত্তম। আর বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ব্যক্তিরা সাধারণত খুব কমই মিথ্যা বলে থাকেন। মানুষ প্রায়ই প্রয়োজনে বা অপ্রয়োজনে মিথ্যা বলে। আপনার সাথেও অনেকেই প্রতিনিয়ত মিথ্যা বলে যাচ্ছে, যা হয়তো আপনি বুঝতেও পারছেন না। তবে কিছু কিছু ব্যাপার আছে যার দিকে লক্ষ্য রাখলে আপনার পক্ষে বোঝা বা আন্দাজ করা সম্ভব যে কেউ চেষ্টা করছে আপনার সাথে মিথ্যা বলার। আমাদের মত সাধারণ মানুষের পক্ষে তো সবসময় সাথে করে একটা পলিগ্রাফ (যাকে লাই ডিটেক্টর বলা হয় সাধারণত) ঘোরা সম্ভব না, তাই নিচের ব্যাপার গুলোর দিকে লক্ষ্য রাখুন এবং খেয়াল করুন সন্দেহজনক ব্যাক্তিকে। যে তার মধ্যে এমন কোন অভিব্যাক্তি দেখা যাচ্ছে কি না।

 ১. আপনার সাথে মিথ্যা বলছে এমন কেউ সরাসরি আপনার চোখের দিকে তাকাবে না, অথবা এত বেশিবার তাকাবে যে আপনার নিজের কাছেই ব্যাপারটা অস্বাভাবিক লাগবে। মিথ্যা বলার সময় মানুষ সাধারণত যার সাথে মিথ্যা বলা হচ্ছে তার চোখের দিকে তাকায় না। নিচের দিকে অথবা আশে পাশে তাকায়। কারণ তাদের ধারণা, তাদের চোখ দেখলেই আপনি বুঝে ফেলবেন যে তারা মিথ্যা বলছে।

 ২. আপনি খেয়াল করে থাকবেন হয়তো আপনাকে যদি কেউ প্রশ্ন করে, তুমি কি আমার মোবাইল ধরেছ? আপনি উত্তর দেন এইভাবে “হ্যাঁ” অথবা “না”। কারণ আপনি হয় তার মোবাইল ধরেছেন বা ধরেন নি। আপনি সত্য বলছেন। কিন্তু কেউ যদি মিথ্যা বলে থাকে, তাহলে “তুমি কি আমার মোবাইল ধরেছ” এর উত্তর হবে “কই না তো! আমি কোন মোবাইল ধরি নি” বা “তুমি কি দেখেছে যে আমি ধরেছি?” তারা আপনাকে উলটো প্রশ্ন করবে, এবং এইটুকু সময়ের ভেতরেই একটা উত্তর বানানোর চেষ্টা করবে।

 ৩. কেউ মিথ্যা বলছে এটা বুঝার অন্যতম উপায় হচ্ছে তার বডি ল্যাঙ্গুয়েজের দিকে খেয়াল করা। দেখবেন, আপনার সাথে যে মিথ্যা বলছে সে সরাসরি আপনার দিকে তাকাচ্ছে না, অথবা উলটো দিকে ঘুরে কথা বলছে বা কোন কাজ করার ভান করে কথা বলার চেষ্টা করছে। মিথ্যা বলার সময় অনেকেই হাত আড়াআড়ি করে ভাজ করে রাখে বুকের কাছে, অথবা পকেটে হাত ঢুকিয়ে রাখে। অনেকেই আছে যারা মিথ্যা বলার সময় চোখের পলক ফেলে ঘন ঘন, আঙ্গুল মোচড়ায়, চুল বা নাকে হাত দেয়, অথবা হাতের কাছে কোন জিনিস থাকলে সেটা নিয়ে অস্বাভাবিকভাবে নাড়াচাড়া করে।

৪. মিথ্যাবাদীরা সাধারণত চেষ্টা করে কথা অনেক লম্বা করার। যে কথাটা দুই এক লাইনেই শেষ করা যায় তার সেটাকে টেনে লম্বা করে দশ বিশ লাইন। তার গল্প বানায়, বেশি কথা বলতে শুরু করে। কারণ তাদের ধারণা, অনেক বেশি বর্ণনা করলে তাদের কথা আপনার কাছে বেশি বিশ্বাসযোগ্য হবে।

 ৫. মিথ্যা বলার সময়ে অনেকেই আক্রমণাত্মক হয়ে পড়ে। খেয়াল করে দেখবেন অনেকেই মিথ্যা বলার সময় রেগে যায়, চেঁচামেচি করে কথা বলার চেষ্টা করে। তাদের উদ্দেশ্য থাকে এই যে, তাদের রাগ দেখে আপনি হয়তো প্রশ্নটা পরে করবেন, বা একসময় ভুলে যাবেন।

 ৬. অনেক কাঁচা মিথ্যা বাদী আছে যারা মিথ্যা বলার সময় ঘামতে শুরু করে। মিথ্যা বলার সময় মানুষের রক্তচাপ বেড়ে যায়, ফলে অনেকেই অস্বাভাবিকভাবে ঘামতে শুরু করে।

 ৭. গলা শুকিয়ে যায় বা বারবার ঢোক গেলার চেষ্টা করে মিথ্যা বলার সময়। অনেক দক্ষ মিথ্যুকরাও অনেক সময় এই সমস্যায় পড়ে যায়। মিথ্যা বলার সময় গলা শুকিয়ে যায়, বার বার ঢোক গিলতে শুরু করে। অনেকে মিথ্যা বলা শুরু করার আগে আপনার কাছ থেকে পানি চেয়ে নিবে যাতে এইসব লক্ষণ যাতে প্রকাশ না পায়।

৮. আমাদের চেহারার অভিব্যাক্তি বা ফেশিয়াল এক্সপ্রেশন এর উপর অনেক সময়ই আমাদের নিয়ন্ত্রণ থাকে না। কারো সাথে কথা বলার সময় খেয়াল রাখুন তার চেহারার অভিব্যক্তির দিকে। সাধারণত এসব চেহারার অভিব্যক্তি খুবই স্বল্প সময় এর জন্য হয়ে থাকে। তাই এগুলোকে মাইক্রো এক্সপ্রেশন বলা হয়। হয়তো হালকা হাসির রেখা, অথবা ভীত দৃষ্টি যার স্থায়িত্ব ২-৩ সেকেন্ড। এগুলো আমাদের চোখে অনেক সময় না ও পড়তে পারে যদিও আপনি কারো চেহারার দিকে তাকিয়ে থাকেন কথা বলার সময়। কিন্তু আমাদের অবচেতন মন আমাদের সতর্ক করে দেয়।

 ৯. যদি আপনার সন্দেহ হয় কেউ আপনার সাথে মিথ্যা বলছে তাহলে তাকে প্রশ্ন করুন। বার বার একই প্রশ্ন করতে থাকুন কিছু সময় পরপর। এবং মেলানোর চেষ্টা করুন আগের বলা কথার সাথে এখনকার বলা কথার মিল আছে কি না? বক্তাকে উৎসাহ দিন যতটা সম্ভব বিস্তারিত বলার। কারণ যে মিথ্যা বলছে সে এখন যা বলবে, তার পরের দিন যদি একই কাহিনী বলার চেষ্টা করে তাহলে আপনি অবশ্যই সে কাহিনীতে অনেক নতুন জিনিস খুঁজে পাবেন, অথবা অনেক লাইন হারিয়ে যাবে যা সে আগের দিন বলেছিলো। তো শুরু হোক লাই ডিটেক্টর যন্ত্র ছাড়াই মিথ্যাবাদীকে শনাক্ত করার কাজ।

No comments:

Post a Comment