আত্মহত্যার
মত কঠিন সিদ্ধান্ত পৃথিবীতে আর কিইবা হতে পারে! হঠাৎ করেই আত্মহননের মতন
প্রাণঘাতী একটি সিদ্ধান্ত আপনাকে ঠেলে দিতে পারে এমন একটি পথে-যা থেকে ফিরে
আসার কোনও সুযোগ নেই। ধরে নেয়া হয় যে চূড়ান্ত রকম শারীরিক এবং মানসিক
যন্ত্রণা সহ্য করেই মানুষ স্বেচ্ছায় মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে নেয়! ঠিক কি কি
কারনে মানুষ এমন সর্বনাশা পথে পা বাড়ায় তা নিয়ে দেশে বিদেশে ব্যাপক
গবেষণা হয়েছে, হচ্ছে। এবং হয়তো আরও হবে। কেননা দুঃখজনক ভাবেই পৃথিবীতে
ক্রমশ বেড়ে চলেছে আত্মহত্যার হার।
আত্মহত্যার কারন অনুসন্ধান করতে গেলে
সবাই প্রথমে মানসিক অবসাদ কিংবা হতাশার কথাই বলেন। তবে এর বাইরেও বেশ কিছু
উল্লেখযোগ্য কারন আছে যা আপনাকে ক্রমান্বয়ে ঠেলে দিতে পারে আত্মহত্যার মত
ওয়ানওয়ে ট্র্যাফিকের দিকে।তবে এতোসব ইস্যুর ভিড়ে ছোট একটি ইস্যু কিন্তু
প্রায়ই লোকচক্ষুর অন্তরালে থেকে যাচ্ছে।
অবসাদ কিংবা দেনার দায়ের মত
সমস্যা মানুষের জীবনে থাকবেই, তবে যে ব্যাপারটি খুব নিঃশব্দে মানুষকে
আত্মহত্যার পথে ঠেলে নিয়ে যায় সেটি হচ্ছে মানুষের নিঃসঙ্গতা।হৃদয়ের ক্ষত
কিংবা হতাশার ব্যাপারটা শেয়ার করার জন্য তাঁরা খুব বেশি বন্ধু খুঁজে
পাননা। আর সেই চাপা ক্ষত আর বিষাদই ক্রমান্বয়ে বড় হতে হতে একসময় পুরো
স্বত্বাকেই খেয়ে ফেলে।
সংস্কৃতির ধরণ ভিন্ন হলেও আত্মহত্যার কারনগুলো
এখানেও প্রায় একই- বিষাদ এবং নিঃসঙ্গতা। এছাড়া পশ্চিমাদের নিজস্ব
সংস্কৃতি এবং লাইফ স্টাইলও (ড্রাগস,অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন এবং
বিশ্বাসহীনতা) কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাদের আত্মহননের পথে ঠেলে দেয়।
একটা
মানুষ যখন আত্মহত্যা করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন তখন হয়তো খুব বেশি
লাভক্ষতি ভেবে দেখবার মতন মানসিকতা বা সময় থাকেনা। যেকারনে আত্মঘাতী
মানুষদের শেষমুহূর্তের চালচলন কিংবা আত্মহত্যা করার ধরনে বেশ কিছু কমন
প্যাটার্নের অস্তিত্ব খেয়াল করা যায়। গবেষণায় দেখা গেছে বেশির ভাগ মানুষ
নিজেদের জীবনের ইতি টানার জন্য কাকতালীয়ভাবে সোমবারকেই বেছে নেন!
‘আত্মহত্যা’
বিষয়টি নিয়ে গবেষকরা যত সামনে এগিয়েছেন- ততই তারা এর সাথে সমাজ এবং
সংস্কৃতির একটা শক্ত যোগাযোগের নমুনা দেখতে পেয়েছেন। বিশেষ করে
ভারত-বাংলাদেশ সহ ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন স্থানে সমাজ ব্যবস্থা কিংবা
সংস্কৃতির কারনে বিপুল সংখ্যক মানুষ বাধ্য হয় আত্মহত্যার মত ভয়াবহ
পরিণতির দিকে যেতেমানুষ
যখন মনে করে সে বেঁচে থেকে কারো উপকার হচ্ছে না আবার মরে গেলেও কারো ক্ষতি
হচ্ছে না । অতএব-বেঁচে থাকার রেজাল্ট জিরো । তখনইআত্মহত্যা করে....
কোন
মানুষ কেবল তখনই আত্মহত্যা করতে উদ্যোত হতে পারে যখন তার নিরাশা অত্যন্ত
চরমে পৌঁছে, যখন আশার কোনো আলো তার হৃদয়ে অনুভূত হয় না, যখন তার অস্তিত্ব
ও সত্তার কোন মূল্যবোধ অবশিষ্ট রয়েছে বলে অনুভূত হয়না, অর্থাৎ যেসব
‘মূল্যের’ ভিত্তিতে সে এতদিন অস্তিত্বে ছিল এবং যেসব ‘মূল্য-বোধের’সাথে তার
সত্তার পরিচিতি ছিল, সেই মূল্য-নির্ধারিত ‘পরিচিতি’এখন নিঃশেষ হয়ে
গিয়েছে, এখন তার বেঁচে থাকার কোন মানে নেই। এই ছোট্ট প্রবন্ধটিতে ব্যক্তির
প্রকৃতিজাত-স্পৃহা ও সামাজিক মূল্যবোধের মধ্যে যে পার্থক্য থাকে, সেই
পার্থক্য ও আল্লাহতে বিশ্বাসের অভাবে মানুষ কেন আত্মহত্যার কিনারায় উপনীত
হতে পারে -তা আলোচনা করব। প্রথমেই বলে রাখি ‘আশা’ হচ্ছে ঈমানের এক প্রধান
অংশ (আল্লাহর অনুগ্রহের আশা, তাঁর উদ্ধারের আশা)।. আল্লাহ বলেন, ‘হে আমার
বান্দাগণ যারা নিজেদের উপর যুলুম করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো
না।’ (৩৯:৫৩)।. আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমরা নিজেদেরকে হত্যা করো না।’ (৪:২৯)
কেউ যখন আত্মহত্যা করে তখন সে ঈমানের পরিধীর বাইরে গিয়েই করে, অর্থাৎ সে
ঈমানশুন্য হয়ে পড়ে। আত্মহত্যাকারী এক ব্যক্তির জানাযা নবী (সা.) পড়েন
নি। এতেই ঈমানের সাথে বিষয়টির সম্পর্ক স্পষ্ট হয়। তবে জানাযা করার
ফতোয়াও আছে।
বিশ্বাস হচ্ছে মানুষকে হতাশা ও নিরাশা থেকে বাঁচানোর এক অতি
মূল্যবান উপাদান। মানুষ সামাজিক জীব এবং সমাজবদ্ধ জীবনে তার কিছু পরিচিতি
আসে। সমাজ কিছু মূল্যবোধের উপর গঠিত হয় এবং প্রত্যেক ব্যক্তি শৈশব থেকে
সেই মূল্যবোধে প্রবেশ করতে থাকে। ভাষাই এর প্রধান মাধ্যম হয়। এই মাধ্যমে
সম্ভবত আড়াই থেকে সাড়ে তিন বৎসর বয়সেই তার ‘আমিত্ব’ (I-ness), অর্থাৎ
তার নিজেকে আলাদা-সত্তা অনুভব করতে শুরু করে: সে নিজ নামে অন্যদের থেকে
আলাদা –এই বুঝ পেতে থাকে। কিন্তু এই আমিত্বটাও বহুলাংশে সামাজিক (সেটা
দীর্ঘ আলোচনা বিধায় আপাতত এক পাশে রাখা যাক)।. সামাজিক সিস্টেমে
পর্যায়ক্রমিকভাবে প্রবেশের সাথে সাথে সে সামাজিক মূল্যবোধকে আত্মস্থ করে।
ধন্যবাদকোন
ব্যাক্তি তার বুদ্ধিমত্তা বা বিচার বিবেচনা হারিয়ে ফেলে এবং বেঁচে থাকার
প্রতি অনীহা চলে আশে , তখন সে এই আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। আত্মহত্যা করার
সময় অনেক কষ্ট পাওয়ার মুহূর্ত গুলো মনে করতে থাকে এবং তার বেঁচে থাকার কোন
কারন খুঁজে পায় না। খুঁজে পায় না বলতে সে খুঁজতেই চায় না। এমন অনেক কষ্ট যা
কারো সাথে শেয়ার করতে পারে না এবং জীবনের কাছে হাড় মেনে নেয়। অনেকে আছে
যারা প্রেমে ব্যার্থ হয়ে আত্মহত্যা করে। তারা যদি একবার প্রেমিকার দেয়া
কষ্টের চেয়ে , তার মৃত্যুতে , তার বাবা মা যে কষ্ট পাবে অথবা বাবা মা যে
কষ্ট করে তাকে এতবড় করলো তাদের দিকটা চিন্তা করলে এমন করা সম্ভব না।
এইজন্যই আমি আগেই বলছি , আত্মহত্যার চেষ্টারত ব্যাক্তির ভালো মন্দ বিচারের
ক্ষমতা বা বুদ্ধিমত্তা থাকে না বললেই চলে। আর যদি বুদ্ধির উদয় হয় তাহলে
আত্মহত্যা করা তার পক্ষে সম্ভব হয় না। সবসময় যেন বুদ্ধিমত্তার জয় হয়,
আত্মহত্যা মহা পাপ । আল্লাহ্ সবাইকে এই পাপ কাজ করা থেকে বিরত রাখুন -
আমীন। ধন্যবাদ ।
No comments:
Post a Comment